বমি হওয়া মানেই যে শরীরে বড় কোনো রোগ হয়েছে এমন কিন্তুু নয়। অনেক সময় খুব সাধারণ কারণেও বমি হতে পারে। মূলত বমি বমি ভাব মস্তিষ্কে শুরু হয়, সেখানে মানসিক, রাসায়নিক ট্রিগারগুলো আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে পারে। যার ফলে পেটের পেশিগুলো অনিয়মিতভাবে কাজ করতে শুরু করে এবং আপনি বমি বমি ভাব অনুভব করেন। হরমোন ব্যাধি, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, টেনশন, এসিডিটি ইত্যাদি কারণেও বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। এমন হলে কিছু খাবার এই সমস্যা দূর করতে আপনাকে সহয়তা করতে পারে। যখন আপনি বমি করেন বা বমি বমি ভাব অনুভব করেন তখন শরীরে হাইড্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া ও পানি পান করা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক বমি হলে কী খাবার খাওয়া উচিত।
পানি: পানি সর্বদা হাইড্রেশনের একটি ভাল উৎস। তাই আপনি ডিহাইড্রেশন বা বমি বমি ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বেশি বেশি পানি পান ও পানীয় খাবার খেতে পারেন। তবে খুব মিষ্টি, ক্যাফেইনযুক্ত, বা দুগ্ধ-ভিত্তিক পানীয় আপনার বমি বমি ভাব আরও খারাপ করতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
আদা: পেটের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে আদার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে করা হয়। আদাতে রয়েছে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, যেমন জিনজারোল, প্যারাডল এবং শোগাওল।এই যৌগগুলো আপনার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং পেটের সাথে বমি বমি ভাবের সমস্যা ঠিক করতে সহয়তা করে। গর্ভাবস্থায় সকালের বমি হওয়া বা বমি বমি ভাবের অসুস্থতার জন্য আদা একটি নিরাপদ এবং কার্যকর চিকিৎসা হতে পারে। আপনি সরাসারি আদার রস করে বা আদার চা বানিয়ে পান করতে পারেন।
লেবু: বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব অসুস্থতার জন্য লেবু একটি জনপ্রিয় নিরাময় হতে পারে। লেবু আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও একটি তাজা লেবুর ঘ্রাণ নেওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের বমি বমি ভাব কমাতে সহয়তা করে।
ঠান্ডা খাবার: এমন অবস্থায় আপনার শরীর গরম খাবারের চেয়ে ঠান্ডা খাবার বেশি সহ্য করতে পারবে। ঠান্ডা খাবার হিসেবে আপনি আইসক্রিম, ঠাণ্ডা ফল, দই, কাস্টার্ড এবং হিমায়িত আইস পপ খেতে পারেন। যদি আপনার বমি বমি ভাব খাবার খাওয়া আপনার জন্য কঠিন করে তোলে তাহলে আপনি শুধু বরফের কিউব চুষে খেতে পারেন। এটি ধীরে ধীরে আপনার শরীরে পানির প্রয়োজন পূরণ করবে।
ভাত, আলু এবং নুডুলস: ভারী খাবার হিসেবে আপনি সাধারণ খাবার যেমন ভাত, আলু এবং নুডুলস খেতে পারেন। এই খাবারগুলো প্রস্তুত করা সহজ এবং এতে উচ্চ মানের ক্যালরি রয়েছে। এগুলো আপনার পেট স্থির করতে সহয়তা করতে পারে। মসৃণ, বর্ণহীন এবং গন্ধহীন খাবারগুলো প্রায়শই আপনার শরীর সহজে সহ্য করতে পারে। কারণ এ জাতীয় খাবার তীব্র স্বাদযুক্ত খাবারের তুলনায় কম পরিমাণে বমি বমি ভাব সৃষ্টি করে।ভাত আপনি হালকা মশলাযু্ক্ত তরকারীর সাথে খেতে পারেন।
বিকল্পভাবে, ভাতের মতো অতিরিক্ত ক্যালোরির জন্য আপনি আলু সেদ্ধ, স্টিম, বেকড বা সামান্য মাখন এবং দুধ দিয়ে ম্যাশ করে খেতে পারেন। এছাড়াও নুডুলস সিদ্ধ করে সাধারণভাবে খাওয়া যেতে পারে। আপনার শরীরে তরল ঘাটতি পূরণ করতে নুডুলস হালকা ঝোল করে রান্না করে খেতে পারেন।
কলা: বমি হলে বা বমি বমি ভাব হলে প্রায় সময় খাবার খাওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে।
এই কারণেই এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে এই সময় আপনি যে খাবারগুলো খাচ্ছেন সেগুলো পুষ্টিকর এবং আপনার শরীরকে শক্তিশালী থাকতে এবং পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করার জন্য শক্তি সরবরাহ করছে কীনা। কলা পটাসিয়াম প্রতিস্থাপন করতে সাহায্য করে। মাত্র ১টি মাঝারি আকারের কলাতে রয়েছে ১০৫ ক্যালোরি, ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট।
বাদাম: প্রোটিনের অভাব আপনার শরীরে বমি বমি ভাবকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। প্রোটিনের অভাব পূরণ করার জন্য আপনি বাদাম খেতে পারেন। বাদাম দ্রুত আপনার ক্ষয়প্রাপ্ত শক্তি পূরণ করবে এবং আপনার বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করবে। “অত্যধিক ক্ষুধা, রক্তে কম শর্করা বা গর্ভাবস্থার কারণে বমি বমি ভাব বাদামের প্রোটিন এবং চর্বিকে ভালভাবে সাড়া দিতে পারে। কিন্তু তিনি সতর্ক করেন যে আপনি যদি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, বাদাম এবং প্রোটিন বমি বমি ভাব আরও খারাপ করতে পারে। যেহেতু প্রোটিন এবং চর্বি ধীরে ধীরে হজম হয় তাই আপনি যদি বাদাম বেশি পরিমাণে খান তাহলে বমি বমি ভাব বাড়াতে পারে।
পুদিনা: পুদিনা বমি বমি ভাবের জন্য একটি কার্যকারী খাবার কারণ এটি আমাদের পাচনতন্ত্রের সমস্যা ঠিক করতে সহয়তা করে। পুদিনা আমাদের পেটের সমস্ত প্রক্রিয়া একই সময়ে আরও ভালভাবে কাজ করতে সহয়তা করে। আপনি যদি অন্য খাবারে পুদিনা পাতা খেতে না চান তবে আপনি কিছু তাজা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও, আপনি যদি পুদিনা খাওয়া বা পান করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হন তবে পুদিনা অপরিহার্য তেল ব্যবহার করে অ্যারোমাথেরাপির সাহায্যও নিতে পারেন।
বমি হলে বা বমি বমি ভাব হলে না খেতে ইচ্ছা করলেও আপনাকে অবশ্যই খেতে হবে৷ যদি আপনি কম পানি পান করেন বা কম খাবার খান তাহলে আপনি ডিহাইড্রেশনসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এসময় আপনাকে আপনার খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাবার বেচেঁ নিতে হবে যে খাবারগুলো আপনার পাকস্থলি সুস্থ রাখতে এবং শরীরে শক্তি সঞ্চয়ে সহয়তা করবে। যদি আপনার বমি হওয়া দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।