ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা
ডেঙ্গু হচ্ছে এক ধরনের ভাইরাস যা এডিস গোত্রের স্ত্রী মশাবাহিত একটি রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গুর জীবাণু এক মানুষ থেকে থেকে অন্য মানুষের মধ্যে মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় না। এটি ছড়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে যদি এডিস মশা কামড়ায় উক্ত মশা যদি কোন সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তাহলেই সেই মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে করোনা মহামারীর সময় ওতটা ডেঙ্গু দেখা না গেলেও ২০২১ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্তে মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের।
ঠিক তারপরের বছর ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল ২৮১ জন। আর এই বছর এসে বলাই যায় ডেঙ্গু প্রায় মহামারী আকার ধারণ করেছে। তাই ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আমাদের সবার জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ সব বয়সের মানুষেরই ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা গুলো যদি জানা থাকে তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন তাহলে ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা, ডেঙ্গুর কারণ, লক্ষণ ,প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেই।
ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা ও চার্ট
ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীর পানিশূন্যতা ও পুষ্টিহীনতার সম্মুখীন হয়। তাই সঠিক খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু পুষ্টিকর খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
১) ডালিম: ডালিমে থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও প্রচুর পরিমাণে মিনারেল। প্লাটিলেটার সংখ্যা বাড়াতে নিয়মিত ডালিম খাওয়া উচিত। এটি অনেক উপকারী ফল এই ফল খেলে শরীরের সকল ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়ে যায়। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ডালিম ফলকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
২) কমলা: কমলা এবং কমলার রস ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে অনেক ভালো উপকারে আসে। কমলা তে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে থাকে।
৩) পেঁপে পাতার জুস: ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীর শরীরে প্লাটিলেট কমে যায়। এ সময়ে পেঁপে পাতা অনেক উপকারে আসে। পেপে পাতা পাপাইন ও কিমোপেইন এনজাইম সমৃদ্ধ যা হজমে অনেক বেশি সহায়তা করে। এবং প্লাটিলেটের পরিমাণও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই জন্য ডেঙ্গু রোগীদের প্রতিদিন ৩০ ml পেঁপে পাতার জুস খাওয়াতে হবে। এই জুস ঘরে বসেই তৈরি করা যায়।
৪) ডাবের পানি: ডেঙ্গু জ্বর শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা সৃষ্টি করে। এর ফলে হয় ডিহাইড্রেশন। এই সময় ডাবের পানি অনেক উপকারে আসে। ডাবের পানিতে আছে ইলেকট্রোলাইটের মত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
৫) ব্রকলি: ব্রকলি ভিটামিন কে এর ভালো উৎস। আর ভিটামিন কে রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ব্রুকলি এন্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ সমৃদ্ধ। ডেঙ্গু রোগীকে বেশি বেশি ব্রকলি খাওয়ানো উচিত।
6) মেথি: মেথি অতিরিক্ত মাত্রায় জ্বর কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। ডেঙ্গু জ্বর হলে মেথি রোগীকে খুব সহজে ঘুমিয়ে যেতে সাহায্য করে।
7) কিউইফল: এই ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। কিউইফল এ আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। এই ফল নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও ইলেকট্রোলাইট স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই ফলটি খেলে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই ডেঙ্গু রোগীকে এই ফল খাওয়ানো উচিত।
8) পালং শাক: পালংশাকে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পালংশাক বেশি বেশি খেলে অতি দ্রুত শরীরে প্লাটিলেট এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
সবশেষে,
ডেঙ্গু খুবই সাধারন একটি রোগ, কিন্তু অবহেলার কারণে এই রোগ বেশি মারাত্মক হয়। বিশেষ করে শহর অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। তাই শহরের মানুষকে একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে যাদের প্রথমে একবার ডেঙ্গু হয়েছে তাদের সবচাইতে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু সংক্রমণ খুবই মারাত্মক হতে পারে। তাই সব সময় সচেতন থাকুন। এবং ডেঙ্গুর রোগ নিয়ে অবহেলা না করে খুব দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।